রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন

নিজের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’তে মাসাকাদজার রাজকীয় বিদায়

নিজের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’তে মাসাকাদজার রাজকীয় বিদায়

স্পোর্টস ডেস্ক: সব চমক যেনো বিদায়ী ম্যাচের জন্য জমিয়ে রাখলেন। রীতিমতো আফগান বোলারদের উপর চালিয়েছেন ব্যাটিং তাণ্ডব। দলকে জেতালেন নিজেও জিতলেন। ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি ঘটিয়েছেন জিম্বাবুয়ান ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা।

ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে খেললেন ৭১ রানের ঝলমলে এক ঝড়ো ইনিংস। ৪২ বলে চার বাউন্ডারি ও পাঁচ ওভার বাউন্ডারিতে সাজান নান্দনিক এই ইনিংসটি। এই দুর্দান্ত ইনিংস খেলার মধ্য দিয়ে রাজকীয় বিদায় ঘটল মাসাকাদজার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাসাকাদজার শুরুটা ছিলো চমক জাগানিয়া। ঘরের মাঠে ২০০১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের অভিষেক টেস্টেই খেলেছিলেন ৩১৬ বলে ১১৯ রানের এক ইনিংস। যা ছিলো তৎকালীন সময়ে অভিষেক টেস্টে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরির রেকর্ড। তার সে রেকর্ডে ভর করে সে ম্যাচে অবিশ্বাস্য এক ড্র পায় জিম্বাবুয়ে।

কিন্তু এরপর আর সে অর্থে বড় কিছু হয়নি মাসাকাদজার ক্যারিয়ারে। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের সঙ্গে সঙ্গে নিচের দিকে গেছে মাসাকাদজার ক্যারিয়ারের গ্রাফটাও। তবু দেশের অন্যান্য অনেক ক্রিকেটারের চেয়ে এগিয়েই থাকবেন তিনি। এর মধ্যে ২০০৯ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে এক সিরিজে ৪৬৭ রান করে তখনকার সময়ের বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন মাসাকাদজা।

প্রায় দুই দশক ছুঁই ছুঁই ক্যারিয়ারে জিম্বাবুয়ের জার্সি গায়ে ৩৮ টেস্ট, ২০৯ ওয়ানডে এবং ৬৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন মাসাকাদজা। সমান ৫টি করে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন টেস্ট ও ওয়ানডেতে। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ৩০ গড়ে করেছেন ২২২৩ রান, ওয়ানডেতে ২৭ গড়ে তার সংগ্রহ ৫৬৫৮ রান। এছাড়া ১১ অর্ধশতকে টি-টোয়েন্টিতে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৬৬২ রানের মালিক তিনি। ক্যারিয়ার বেস্ট অপরাজিত ৯১ রান।

খুলনায় ২০০৬ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেই টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মাসাকাদজা। ১৩ বছর পর শেষটাও করলেন সেই দেশের বিপক্ষেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শুরুটা হয়েছিল জিম্বাবুয়ের স্বর্ণযুগের শেষ সময়ে। আর বিদায় নিচ্ছেন যখন তার দেশের ক্রিকেট ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও পা পড়েছে তার অনেকবার। আর জাতীয় দলের হয়ে তো প্রায় আসা হয় তার। তাই এই দেশকে (বাংলাদেশকে) নিজের আরেকটি বাড়ি মনে করতে কখনও দ্বিধা হয়নি তার। তাই প্রাপ্য সম্মানটুকুও দেয়ার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। স্মারক উপহারসহ ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয় তার হাতে।

তবে ক্যারিয়ারের শেষভাগে এসে একটি আক্ষেপ রয়েই গেছে তার মধ্যে। পরিকল্পনা ছিলো ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে, তবেই বিদায় জানাবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। কিন্তু আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়ার কারণে সেই বিশ্বকাপ তো পরে, চলতি বছরে হতে যাওয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও খেলা হবে না জিম্বাবুয়ের। তাই আগেভাগেই নিজের ক্যারিয়ার গুটিয়ে নিলেন ৩৬ বছর বয়সী মাসাকাদজা।

পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই অবশ্য এমন অনেক আক্ষেপ সঙ্গী হয়ে ছিলো মাসাকাদজার। পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত জীবনের খাতিরে অভিষেকের পরেও ক্যারিয়ার থেকে হারিয়ে ফেলেছেন ৩টি বছর। পরে আবার জিম্বাবুয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকায় টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারেননি আরও কয়েক বছর। আক্ষেপ ছিলো ২০১৫ সালের আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে না পারারও। তবে বছর চারেক আগে সেটি মিটিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরে অংশ নিয়ে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877